মোঃ ফারুক,পেকুয়া :

জটিল ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ছিল পেকুয়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মেহেরনামা নন্দীর পাড়া এলাকার মোকতার আহমদ(৭০) পুত্র আবদু শুক্কুর(৪০)। দেনা ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় অনেকদিন চিকিৎসা চালিয়েছেন। সর্বশেষ পরিবারের শেষ সম্বল ভিটাও বন্ধক রেখে চিকিৎসা করালেন। তাও শেষ রক্ষা হল না। এক দিনের ব্যবধানে অসহায় পিতা-পুত্রের করুণ মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৬ডিসেম্বর) মোকতার আহমদ (৭০) ক্যান্সার আর বৃহস্পতিবার (৭ডিসেম্বর) আবদু শুক্কুর (৪০) লিভার ক্যান্সারে মৃত্যু হয়।

বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের নন্দীর পাড়া এলাকায় ঈদগাঁও ময়দানে তাদের নামাজে জানাযা অনুষ্টিত হয়। এক দিনের ব্যবধানে এক পরিবারের দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

জানা গেছে, মোকতার আহমদ কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। তার ৬ ছেলে ৩ মেয়ে। পরিবারে অসহায়ত্বের কারণে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারেনি। বিগত ২বছর আগে তার শরীরে অসুস্থতা ধরা পড়ে। আর্থিক অসহায়ের কারণে উন্নত চিকিৎসা করাতে না পারলেও পেকুয়া-চকরিয়ায় বিভিন্ন ক্লিনিংকে চিকিৎসা নেয়। সর্বশেষ বিগত ১বছর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। আর্থিক অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় নিয়ে আসা হয় বাড়িতে। এরই মাঝে তার ১ম পুত্র আবদু শুক্কুর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরিবার মনে করেছিল রোগ তেমন জটিল নয়। উন্নত চিকিৎসা ও পরিক্ষা নিরিক্ষিার জন্য আর্থিক অবস্থাও ছিল খারাপ। এছাড়া পিতাও রোগাক্রান্ত হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছিল। সর্বশেষ গত এক মাস আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালে তার লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসা খরচ চালাতে ভিটা বন্ধক রেখে টাকা নেওয়া হয়। তারও শেষ রক্ষা হয়নি এক মাস চিকিৎসাধীণ থাকাবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে ৩শিশু পুত্র ও স্ত্রী রেখে যান। বৃহস্পতিবার আর শুক্রবার দু’জনের দাফন সম্পন্ন হয়।

আবদু শুক্কুরের স্ত্রী রুবাইদা বেগম বলেন, আমার স্বামী কৃষক। শ্বশুর অসুস্থ থাকায় দেনা করে আর প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় যা পেরেছি চিকিৎসা করিয়েছি। বুধবার তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। বৃহস্পতিবার দাফন সম্পন্ন করার পরপরই স্বামীর মৃত্যু হয়। শুক্রবার তার দাফন হয়। বড় সন্তান সাকিবুল ইসলাম বাবু ৪র্থ শ্রেনীতে ২য় সন্তান রিফাত ২য় শ্রেনীতে আর হামিমের বয়স ২বছর মাত্র। স্বামীর চিকিৎসার জন্য ভিটা বন্ধক রেখেছি। তার আয়ের উপর চলতো আমাদের সংসার। তাকে অকালে হারিয়ে ছেলেদের নিয়ে কিভাবে চলব তা ভেবে পাচ্ছিনা। ভিক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নাই। দরিদ্র এ পরিবারের প্রতি হৃদয়বান ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে সন্তানদের লেখাপড়া অন্তত চলত। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

ইউপি সদস্য আবু ছালেখ বলেন, মহান আল্লাহ ডাকে সবাইকে যেতে হবে। তবে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে একদিনের ব্যবধানে পিতা পুত্রের মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমি স্থানীয় ইউপি সদস্য হিসাবে অসহায় পরিবারের প্রতি যা করার করবো। হৃদয়বান অনেক ব্যক্তি আছে তারা চাইলে এ পরিবারটি সুঃখে শান্তিতে চলতে পারবে। অন্তত বন্ধক রাখা ভিটাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু তাদের পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।